সৈয়দপুরে কাগজের ঠোঙ্গা বানিয়ে চলে পাঁচ শতাধিক পরিবার
নয়া দিগন্ত আব্দুল গফুর নীলফামারী
বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০১৩, ০৩:০৯
নীলফামারীর সৈয়দপুরে পাঁচ শতাধিক পরিবার কাগজের ঠোঙ্গা বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। এসব পরিবারের সদস্যরা ঘরে বসে কাগজের ঠোঙ্গা বানিয়ে উপার্জিত আয়ে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে। অবাঙালি অধ্যুষিত সৈয়দপুর শহরে বাস করছে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ। বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক দরিদ্র পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই এখানে পুরুষদের পাশাপাশি পরিবারের মহিলা ও অন্য সদস্যরা ঘরে বসে বিভিন্ন হাতের কাজ করে উপার্জন করেন। এসব কাজের মধ্যে কাগজের ঠোঙ্গা তৈরির কাজটি অন্যতম আয়ের উৎস। শহরের গোলাহাট ক্যাম্প, বাঁশবাড়ী, কাজিহাট, হাওয়ালদারপাড়া, সুরকি মহল্লা, লালগেট, মিস্ত্রিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পরিবারের নারী-পুরুষদের সাথে তাদের স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছেলেমেয়েরাও ঘরে বসে এ কাজ করছে। এভাবে পাঁচ শতাধিক পরিবার কাগজের ঠোঙ্গা বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। শহরের তিন নম্বর গোলাহাট এলাকার ননস্ট্যান্ডার্ড পাকিস্তানি ক্যাম্পের সভাপতি মকবুল। চাকরি করেন একটি হার্ডবোর্ড কোম্পানির দারোয়ান পদে। যা বেতন পান তা দিয়ে দু’বেলা ভাত জোটে না পাঁচ সদস্যের পরিবারে। তার ওপর সন্তানদের লেখাপড়া। স্ত্রী শেফালি বেগমের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন ভিন্ন একটি আয়ের ব্যবস্থা করার। শুরু করেন বাজার থেকে কাগজ কিনে এনে ঠোঙ্গা বানানোর কাজ। একমাত্র মেয়ে শিরিনও লেখাপড়ার ফাঁকে মায়ের সাথে ঠোঙ্গা বানায়। এভাবে পাঁচ বছর ধরে ঠোঙ্গা বানিয়ে পড়ালেখাসহ শিরিন আজ এসএসসি পাস করে কলেজে পড়ছে। কুঁড়েঘর থেকে টিনশেড আধা পাকা বাসা করেছে। শহরের চুড়িপট্টি এলাকার ঠোঙ্গা ব্যবসায়ী আনোয়ার জানান, পলিথিনের ব্যাগ বিক্রি ও তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ঠোঙ্গার চাহিদা বেড়েছে। তাই নিজ বাড়িতে কারিগর রেখে ঠোঙ্গা বানিয়ে নিজেই বিক্রি করছি। এতে ব্যয় বাদ দিয়ে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা লাভ হয়। এ বিষয়ে সৈয়দপুর বণিক সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী জানান, এ শিল্পটির বিকাশে একমাত্র বাধা পলিথিন শপিং ব্যাগের যত্রতত্র ব্যবহার। সরকার ২০০২ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা পলিথিনের ব্যাগ বাজারজাত করে যাচ্ছেন। তাই কাগজের তৈরি ঠোঙ্গা কিংবা ব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে এবং পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহারের কুফল তুলে ধরতে হবে। তাহলেই কেবল দিন দিন এ শিল্পের বিকাশ ঘটবে এবং এ পেশায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। নীলফামারী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ জানান, কাগজের তৈরি ঠোঙ্গা ও কাগজের ব্যাগ শিল্পটি প্রসারে সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে জড়িতদের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন